সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৫:২৬ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামে অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা?

চট্টগ্রামে অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা?

স্বদেশ ডেস্ক: কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশ থেকে প্রায়ই ইয়াবার বাহক রোহিঙ্গারা গ্রেফতার হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে। রাজধানী ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে এসেও গ্রেফতার হয়েছে এরা। তবে কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার এক প্রতিবেদন সম্প্রতি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের রীতিমতো চিন্তায় ফেলেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রোহিঙ্গারা ইয়াবার পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে গোপনে অবৈধ অস্ত্র এনে সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, এক সময় মাদক ব্যবসায়ীরা রোহিঙ্গাদের ইয়াবা বহনে ব্যবহার করলেও বর্তমানে এরা সরাসরি ইয়াবা ব্যবসায় নেমেছে। এরা মিয়ানমার থেকে ইয়াবার সঙ্গে অস্ত্রও আনছে। সেসব অস্ত্র যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের কাছে। এদিকে বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডেভেলপমেন্ট কমিটি ও একাধিক রোহিঙ্গা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, ইয়াবা এবং অস্ত্র পাচার ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে আশ্রয় নেওয়া অনেকে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ইয়াবা ব্যবসার জের ধরে ক্যাম্পের ভেতর রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যেও হানাহানি ঘটছে। পাচার হওয়া অস্ত্র সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রির পাশাপাশি তারা নিজেরাও ব্যবহার করছে এই অস্ত্র। কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র আনার বিষয়টি তিনি প্রতিবেদন দিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে জানিয়েছেন। কক্সবাজার জেলার নিরাপত্তার জন্য মোটা দাগে চারটি সমস্যাও চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানে সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কেও মন্তব্য করা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিবেদনে। পুলিশ সুপার জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে অন্তত ৫৪ কিলোমিটার খোলা সীমান্ত রয়েছে। কাঁটাতারবিহীন এই সীমান্তপথে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে অবৈধ অস্ত্র ও ইয়াবা এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, গত দুই মাসে কক্সবাজার এলাকা থেকে ইয়াবাসহ অন্তত ৫০ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে র‌্যাব সাতজনকে, পুলিশ ১৩ জনকে, বিজিবি ১৫ জনকে এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা আটজনকে গ্রেফতার করে। সর্বশেষ গত ২০ মে টেকনাফে বিজিবি সদস্যরা তিন রোহিঙ্গা নারীকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে। এদিকে গত এক বছরে ইয়াবা বহন, সেবন ও কেনাবেচার অভিযোগে বিভিন্ন ক্যাম্পের শতাধিক রোহিঙ্গা আটক হয়েছে। এসব ঘটনায় টেকনাফ ও উখিয়া থানায় নিয়মিত মামলা হয়েছে। টেকনাফ ও উখিয়ায় ৩০টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক বিক্রি ও সেবন ও মজুদের জন্য পাঁচ শতাধিক আখড়া গড়ে উঠেছে। এসব এলাকায় অভিযান চালানোও ঝুঁকিপূর্ণ।
রোহিঙ্গা নেতারা যা বলছেন-পুলিশের বিশেষ শাখার এ প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু বিভিন্ন ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ও বাসিন্দাদের জানান, শুরুর দিকে কিছু না বুঝে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের হয়ে ইয়াবা পাচার করত। নিজেদের কাছে মজুদও রাখত। তবে এটি লাভজনক হওয়ায় অর্থাভাবে অনেক রোহিঙ্গা এখন নিজেরাই ইয়াবা এনে বিক্রি করছে। উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফয়েজু আরাকানি জানান, অভাবের তাড়নায় রোহিঙ্গাদের ক্ষুদ্র একটি অংশ মাদক ও অস্ত্র পাচারে জড়িত হয়েছে। টেকনাফের লেদা ক্যাম্প উন্নয়ন কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম জানান, শুরুর দিকে রোহিঙ্গারা এ ধরনের অবৈধ কাজে ছিল না। হয়ত এ দেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ আগে থেকে এদেশে ইয়াবা পাচার করত। সুযোগ পেয়ে তারা আবারও হয়ত অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। এই রোহিঙ্গা নেতা জানান, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। পুলিশ বিভিন্ন ক্যাম্পে মাদকবিরোধী কর্মসূচি পালন করছে। এভাবে রোহিঙ্গাদের সচেতন করা হচ্ছে। বিষয়টি ইতিবাচক। টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান রমিদা বেগম জানান, অভাব ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে স্থানীয় কিছু লোক রোহিঙ্গাদের এই অবৈধ পথে নামিয়েছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877